মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৫

বিলুপ্তির পথে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক খেলা এখন বিলুপ্তির পথে। কাবাডি, গাদি, বৌচি,ডাংগুলি, লাঠি খেলা সহ হাজারো রকমের খেলা যা একদিন গ্রামবাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে অক্সিজেন যোগাত তা এখন হারিয়ে গেছে। আধুনিক ক্রীড়ার কাছে এরা অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছে। তাই ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলির কদরও কমে গেছে। এখন আর কোন উৎসবে মাইক বাজিয়ে প্রচার করা হয়না ভাইসব আগামীকাল স্থানীয় স্কুল মাঠে বিরাট এক হা ডু ডু খেলার আয়োজন করা হয়েছে। খেলায় অংশ গ্রহণকারী দুটি দূর্ধষ দল উত্তরপাড়া বনাম দক্ষিন পাড়া। বিজয়ীদেরকে দেড়মণ ওজনের এক পেল্লাই খাসি পুরস্কার দেওয়া হবে। সে সব খেলার স্থলে এখন সেখানে পশ্চিমাদের খেলাগুলির মাতুব্বরি চোখ ঝলসে যাচ্ছে। এসব খেলাধুলার নামে পেশি শক্তির প্রদর্শনী চলছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম একধরননের হিংসার যোগান পাচ্ছেন এসব খেলা থেকে। আবার চোখ ধাঁধাঁনো ক্রীড়ানৌপূন্যের চেয়ে অর্থ আয়ের টনিক হিসাবে কাজ করছে এসব খেলাধুলা । নির্লোভ আনন্দের ধারা এখন সব খেলা থেকে উধাও। আর একারণে নির্মল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ক্রীড়ামোদী মানুষেরা।ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ দিয়ে এলাকাবাসীর গর্ব ছিল।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এবারেও সেই নির্মল আনন্দ থেকে এলাকাবাসীকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

কেন হয়েছে সরেজমিনে সেটাই আমাদের পাঠকদের জানাচ্ছেন ফরিদপুর থেকে বিপ্লব কুমার দাস (শাওন)--ফরিদপুরের ভাঙ্গা কুমার নদে ৩শ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ সত্যিই আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে।

ভাঙ্গা উপজেলার কুমার নদের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ এবছরও হলোনা। তবে ২সপ্তাহ আগে থেকেই নদের দুপাড়ে মেলা বসেছে। বাইচ হবেনা জেনে মেলায় আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছেন। তিনশ বছরের ঐতিহ্য মোতাবেক গত ১৮ সেপ্টেম্বর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বকর্মা পুজা উপলক্ষ্যে দক্ষিণ বঙ্গের ৩শ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ ভাঙ্গা কুমার নদে ঐতিহ্যগত ভাবেই আয়োজন করা হয়। তবে এবারে ষাড়ে ষাড়ে লড়াইয়ের কারণে তার আয়োজন হয়ে যায় বলে জানা গেছে। বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ও সাবেক এমপি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে বাইচের কর্তৃত্ব নিয়ে এই দ্বন্দের সূত্রপাত বলে জানা গেছে।

আর একারণকে সামনে রেখে সাম্ভব্য দুর্ঘটনা এড়াতে এবছর বাইচ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে করুপ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নাম না প্রকাশের শর্তে আয়োজকদের একজন জানালেন কি ভাবে হবে এক বনে তো আর দুইবাঘ বাস করতে পারেনা। আর করলেও তাদের হুংকারে অনান্য প্রাণীর জীবন সংশয় হতে পারে। তাই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কতৃপক্ষ ভাবছেন, যেহেতু মাথাব্যথা- সেহেতু মাথাটাই কেটে ফেলা যাক।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিয়ে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি জানালেন, শুনেছি বহু বছরের পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতি বছরই এখানে হয়ে আসছে। কিন্তু এবছর সময় স্বল্পতার কারণে তার আয়োজন করা যায়নি।
বাইচ বন্ধ সর্ম্পকে ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল ইসলাম জানান, দুই গ্রুপের সমন্বয় হীনতার করানে এবছর নৌকা বাইচ হলোনা, এটা স্পষ্ট।

অন্যদিকে ভাঙ্গা উপজেলার পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি সাবেক কমিশনার জগদীষ চন্দ্র মালো জানান, অনেক আগে থেকে দেখে আসছি উপজেলা প্রশাসন অথবা ভাঙ্গা বাজার বনিক সমিতি, নৌকা বাইচ কমিটি দায়িত্ব নিয়ে বাইচটি আয়োজন করে থাকে। এবারেও বাইচটি হবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে আমরা তাকিয়ে ছিলাম।

তার অভিযোগ,উপজেলা চেয়ারম্যান অনেক পরে মিটিং আহ্বান করে মূলত বাইচটি যাতে না হয় সেদিকটাই নিশ্চিত করেছেন। এত স্বল্প সময়ের কারণে কেউই দায়িত্ব নিতে চাননি। তবে এমন হবে আগে থেকে জানানো হলে বা জানা গেলে, সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে বাইচের আয়োজন করত।

তিনি আরো বলেন, গত বছর নৌকা বাইচের দিন জামাতের আমির নিজামির যুদ্ধাপরাধীরর বিচারের রায় হওয়ায় ১৪৪ ধারা জারীর কারনে বাইচটি হতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আমার বয়স ৬৫ বছর আমার বাবা এবং দাদার আমলের আগে থেকে ৩/৪শ বছর যাবৎ বাইচ হয়ে আসছে।

 দু বছর যাবৎ বাইচ না হওয়ায় এলাকাবাসী প্রচ-ভাবে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন