শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৫

আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীপ্রতি ২০০ টাকা ফি সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস!



২৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার। ঘড়ির কাঁটা সকাল সোয়া ৯টার ঘরে। ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি বিভাগের ডক্টরস ডিউটি রুম। একের পর এক রোগী দেখছেন ডিউটি চিকিৎসক ডা. দারবারাজ। তবে শুধু রোগীই দেখছেন না, বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে ফি নিচ্ছিলেন তিনি। প্রথম ১৩ মিনিটে জন রোগী দেখে ৬০০ টাকা নেন ডা. দারবারাজ। দারবারাজের এমন প্রাইভেট প্র্যাকটিস বসে বসে দেখছিলেন আরেক চিকিৎসক ডা. জয়ন্ত সাহা। এক রোগীর কাছে টাকা ভাংতি না থাকায় ডা. জয়ন্ত খুচরা টাকা দিয়ে সহযোগিতাও করেন। এই চিকিৎসক এক রোগীর স্বজনকে বলছিলেন, ‘টাকা দিয়ে দেখালে বসেন। না হলে পরে আইসেন!’ সরকারি হাসপাতালে এমন চিত্রের দালিলিক প্রমাণ রাখতে বুক ব্যথার কথা বলে এই প্রতিবেদক নিজেও ২০০ টাকা দিয়ে ওই চিকিৎসককে দেখান।
নিজের এক বছর বয়সী শিশুসন্তানকে দারবারাজের কাছে ২০০ টাকা ভিজিট দিয়ে দেখিয়েছেন হালিমা খাতুন। সরকারি হাসপাতালে কেন টাকা দিয়ে দেখাবেন জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, কী আর করব! টাকা ছাড়া তো দেখবে না। তাই বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে দেখালাম। আমাদের মতো গরিব মানুষের কাছে ২০০ টাকা অনেক বেশি। তারপরও সন্তানের কথা চিন্তা করেই দেখিয়েছি।
আরেক ভুক্তভোগী কবির হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালে যদি টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয় তাহলে যাব কোথায়? বিষয়টি দেখার কেউ নেই।
সরকারি হাসপাতালে বসে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন কীভাবেÑ জানতে চাইলে ডা. দারবারাজ আমাদের সময়কে বলেন, অসম্ভব। আমি সরকারি কর্মকর্তা। সরকারি হাসপাতালে বসে রোগীদের কাছ থেকে কেন টাকা নেব? অভিযোগ অস্বীকার করার পর এই প্রতিবেদক নিজেই টাকা দিয়ে তাকে দেখিয়েছেন জানালে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগী তাদের স্বজনদের অভিযোগ, এই হাসপাতালে অনেক সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাকে অন্যান্য মফস্বলের সরকারি হাসপাতালের মতো স্বাভাবিক চিত্র হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত তারা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে বসে টাকার বিনিময়ে সেবা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বিষয়ে জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাইয়ূম তালুকদার আমাদের সময়কে বলেন, হাসপাতালে বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার সুযোগ নেই। ডা. দারবারাজ ডা. জয়ন্ত সাহা দুজনই ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। ঈদের সময় চিকিৎসক সংকটের কারণে অতিথি চিকিৎসক হিসেবে তারা এসেছিলেন। কিন্তু তারা তো কাজ করতে পারেন না। বিষয়ে আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব। তবে এই হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক এমন কাজ করেন না বলে দাবি করেন তিনি।
নয়ন শিকদার নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালের আউটডোরে যান তিনি। তিনি গাইনি বিষয়ের চিকিৎসক দেখাতে চাইলেও টিকিট কাউন্টার থেকে তাকে পাঠানো হয় চোখের চিকিৎসকের কাছে। পরে স্ত্রীর চিকিৎসা না করিয়েই ফিরে আসেন বলে জানান তিনি



- See more at: http://www.dainikamadershomoy.com/2015/10/03/50909.php

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন