গোপালগঞ্জ: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর হুমকির মুখে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারছেন না গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ৫ নং কাশিয়ানি ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মশিউর রহমান খানের নেতাকর্মীরা খোকনের সমর্থক, কর্মীদের হত্যার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে খোকনের নেতাকর্মীদের।
শুধু ৫ নং কাশিয়ানি ইউনিয়ন পরিষদই নয় উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে। বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকেও লিখিত জানিয়েছেন একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী। তবে এখনও নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। আগামী ২৩ এপ্রিল কাশিয়ানি উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট হবে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘কাশিয়ানি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমি জেলা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। ওসির সঙ্গেও কথা বলেছি। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মশিউর রহমান খানের নেতাকর্মীরা মোহাম্মদ আলী খোকনের ওপর হামলা করে। কাশিয়ানির খায়ের হাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানায়, হামলাকারীরা বহিরাগত। খোকনের সমর্থকরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছোড়ে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশ বলছেন, ৫ নং কাশিয়ানি ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর রহমান খান এলাকার জনগণের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা কম। তাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও নির্বাচনী মাঠে তিনি খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। অপর দিকে দলের মনোনয়ন না পেলেও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী খোকন ইউনিয়নবাসীর অনুরোধে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি গত ১৪ বছর ধরে ওই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবারও নিরপেক্ষ ভোট হলে জয় পাল্লা তার দিকেই ঝুঁকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, খোকনের জয় নিশ্চিত জেনে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মশিউর রহমান খান। তার আত্মীয়-স্বজন, বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে খোকনের নির্বাচনী কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। খোকনের সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে গেলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়ার অভিযোগ আছে। ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে নেয়ার কথাও প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মশিউর রহমানের অনুগামী, অনুসারীরা। রাতে খোকনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হঠাৎ তল্লাশির নামে হয়রানির অভিযোগও আছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খল বাহিনীর বিরুদ্ধে।
যদিও কাশিয়ানি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এবং গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার তাকে ফোন করে যে সতর্ক করেছেন, তা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি। এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে ঘটনাস্থল দেখে যান। আপনারা তদন্ত করেন।’
জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার এসএম ইমরান হোসেন কে বলেন, ‘কাশিয়ানির ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে। দোষ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেবো।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কাশিয়ানি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর রহমান খানের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে একটি খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব মেলেনি।
জানতে চাইলে কাশিয়ানি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ আমার ইউনিয়নবাসীর অনুরোধেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তাদের ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচিত হবো। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমার ও আমার নেতাকর্মীদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সুদৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন