বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সরকারের দেয়া দুই শতাংশ জমি হারিয়ে দিশেহারা ভ্যানচালক আইয়ুব মুন্সী

অশোক সাহা (শ্যাম),ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক আইয়ুব মুন্সী সরকারের দেয়া দুই শতাংশ জমি পেয়ে সেখানে ঘর তুলে কোন রকমে জীবন-যাপন করছিল। বর্তমানে সেই জমিটুকু হারিয়ে মানবেতর ভাবে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যের বাড়ীর খোলা আকাশের নীচে শীতের মধ্যে স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে কোন রকমে দিন পার করছেন। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমিটুকু হাতিয়ে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে বাড়ী ঘর ভেঙ্গে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। গ্রাম ছেড়ে না গেলে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আইয়ুব মুন্সী ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জমিটুকু ফিরে পেতে এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন আইয়ুব মুন্সী।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, হামিরদী গ্রামের অসহায়, দরিদ্র ভ্যানচালক আইয়ুব মুন্সী ভূমিহীন হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯৭ সালে সরকার তাকে দুই শতাংশ জমি ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেয়। সে জমিতে কিছুদিন আগে ধার দেনা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগীতা নিয়ে একটি ঘর তৈরী করে ছেলে, স্ত্রী’দের নিয়ে বসবাস করে আসছিল। ঘর তোলার সময় আর্থিক সংকটের কারনে তার আয়ের একমাত্র সম্বল ভ্যানটিও বিক্রি করে দেন। পরে ভ্যান ভাড়া নিয়ে সেটা চালিয়ে তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোন রকমে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ভুমিহীন আইয়ুব মুন্সীর সে সুখও বেশী দিন টিকেনি। যে জায়গাটিতে সে তার পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন সে জায়গাটির উপর নজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মো এনামুল হক (এম এ মাষ্টার)। জায়গাটি হাতিয়ে নিয়ে তিনি তার স্ত্রীকে দিয়ে আইয়ুব মুন্সীর বন্দোবস্ত বাতিল করতে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আইয়ুব মুন্সীর বন্দোবস্তটি সম্প্রতি বাতিল করে তা গোপন রাখা হয়।

পরবর্তীতে ২ ডিসেম্বর স্থানীয় তফশিল অফিস থেকে আইয়ুব মুন্সীকে উক্ত জায়গায় প্রবেশ না করার একটি নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু নোটিশ পাঠানোর একদিন আগে অর্থাৎ ১ ডিসেম্বর আইয়ুব আলীর কাছ থেকে উক্ত জায়গাটির খাজনা নেয়া হয়।

আইয়ুব মুন্সী অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি এনামুল মাষ্টার কয়েক ব্যক্তি পুলিশের সহযোগীতায় তার ঘরটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বাঁধা দিতে গেলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে তাকে গ্রাম ছেড়ে চলে না গেলে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান।

আইয়ুব মুন্সী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার সহায়-সম্বল বলতে ছিল এ জায়গাটুকু। তিন ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতাম। আমার ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে দিয়ে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এখন আমি গিয়াস সরদার নামের একজনের বাড়ীতে ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টের মাঝে দিন কাটাচ্ছি। শীতের রাতে খোলাস্থানে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে বেঁচে আছি। একটি ছেলে নবম শ্রেনীতে পড়ালেখা করে। সেও এখন পড়লেখা করতে পারছেনা।

আমি আমার জায়গাটি ফিরে পেতে পুনরায় জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছি। আমি যে জায়গাটিতে ছিলাম সেটি পেতে এনামুল মাষ্টারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ভুমিহীন দাবী করে সেই জায়গাটি লীজ নিতে আবেদন করেছেন। যাদের এত সম্পদ রয়েছে তারা যদি ভুমিহীন হয় তাহলে আমার তো কিছুই নেই, আমি তাহলে কি এটা সরকারের কাছে জানতে চাই।

আইয়ুব মুন্সীকে তার জায়গা থেকে ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে উচ্ছেদ করায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে তারা আইয়ুব মুন্সীর জায়গাটি ফিরিয়ে দেবার দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান, এনামুল মাষ্টার জায়গাটি দখলে নিতে নানা চেষ্টা করছেন। আইয়ুব মুন্সী একেবারেই হতদরিদ্র। স্ত্রী, ছেলেদের নিয়ে তার কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। সরকার যাতে আইয়ুব মুন্সীর জায়গাটি ফিরিয়ে দেয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হবি খাঁ জানান, ভুমিহীন আইয়ুব মুন্সী জায়গাটি হারিয়ে একেবারেই পাগলের মতো হয়ে গেছে। এখন সে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে জমিটি ফিরে পেতে। সরকার তার জমিটি ফিরিয়ে দিবে এটাই আমাদের কামনা।

এসব বিষয় নিয়ে অভিযুক্ত মাষ্টারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা একেবারেই মিথ্যা। যে জায়গাটি সরকার আইয়ুব মুন্সীকে বন্দোবস্ত দিয়েছিল সে জায়গাটি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। কোন এক কারনে তা খাস খতিয়ানে চলে যায়। ভূমিহীন হওয়ায় সরকার আইয়ুবকে বন্দোবস্ত দিলেও পরে আমার স্ত্রী’র আবেদনে সে বন্দোবস্ত বাতিল করে দেয়। এর বিরুদ্ধে সে আদালতে একটি মামলা করেছে। মামলার রায় যা হবে তাই আমি মেনে নেব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন