বিপ্লব কুমার দাস (শাওন),ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ঃ
১ জানুয়ারি,দিনটি ছিলো শুক্রবার, আর পালন করা হলো পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর শহরতলীর তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালন করছে জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন।
এদিকে নির্মান কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পরেও জসীম সংগ্রহশালাটি চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা। ধ্বংশের মুখে কবির বাড়ি ও সংগ্রহশালাটি।
‘‘ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে/ তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে’’ বা ‘‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে/ গাছের ছায়া লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়’’ কিংবা বাবু সেলাম বারে বার, আমার নাম গয়া বাইদ্যা বাবু বাড়ী পদ্মার পাড়’’- এমন শত কবিতা, গল্প, নাটক আর গানের মাধ্যমে পল্লী মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরে যে কবি পেয়েছিলেন পল্লী কবির উপাধী। সেই পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ১১৩তম জন্ম বার্ষিকী বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালন করছে জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন।
১৯০৩ সালের এই দিনে ফরিদপুর শহরতলীর কৈজুরী ইউনিয়নের ছায়াঢাকা পাখি ডাকা নিঝুম পাড়া গাঁ তাম্বুলখানা গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কবি। কবির পিতার নাম আনছারউদ্দীন, মাতার নাম আমেনা খাতুন। তিনি ১৯৩৯ সালে মমতাজ বেগমকে বিবাহ করেন। কবির ৪ ছেলে ২ মেয়ে তারা সকলেই স্বস্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। কবি তার শিক্ষাজীবন শুরু করে ফরিদপুর শহরের হিতৈষী স্কুলে।
পল্লী কবি জসীমদ্দীন বাল্য বয়স থেকেই লেখা লেখি শুরু করেন। কবির ১৪ বছর বয়সে নবম শ্রেনীতে থাকাবস্থায় তৎকালিন কল্লোল পত্রিকায় তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালী। কবি ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি, ১৯৭৬ সালে ২১ শে পদকে ভূষিত হন।
মাটি ও মানুষের কবি জসীমউদ্দীনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শহরতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় চিরনিদ্রায় শায়িত কবি মাজারে পুষ্প মাল্য অর্পন, দোয়া-মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে জসীম ফাউন্ডেশন ও ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। আয়োজন করা হচ্ছে পক্ষকাল ব্যাপী জসীম পল্লী মেলার। এখন মেলা আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে বেশ জোরেশোরেই। মেলা শুরু হবে ১০ জানুয়ারি থেকে চলবে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
সারা বছরই কবির বাড়ি মুখরিত থাকে দূর দূরান্ত থেকে আগত কবির ভক্ত অনুসারী আর দর্শনার্থীদের ভিড়ে। কিন্তু কবির বাড়িতে কিছু ছবি আর পুরোনো ঘড় ছাড়া কোন লাইব্রেরী ও গবেষণাগার না থাকায় নিরাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এখানে দর্শনার্থীদের বিশ্রাম বা খাওয়া দাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ২০১১ সালে সরকার ‘জসীম স্মৃতি সংগ্রহশালা’ নামে একটি মিউজিয়াম তৈরীর উদ্যোগ নেয়।
২০১৩ সালের শেষ দিকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মান শেষ হয়েছে। এখানে গবেষনাগার, গ্যালারী, লাইব্রেরী, গেষ্ট হাউস ও উন্মক্ত মঞ্চ রয়েছে।
শুধুমাত্র কবি পরিবারের সদস্যদের অসহোযোগিতার কারনে সংগ্রহশালাটি চালু কারা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন জসীম ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। ফলে নষ্ট হতে বসেছে ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মত জসিম স্মৃতি সংগ্রহশালাটি। সংগ্রহশালার চত্বরটি এখন কাশবণ আর জংগোলে ভোরেগেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবন গুলোও নষ্ট হতে চলেছে। এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা দ্রুত সংগ্রহশালাটি উদ্বোধনের আহবান জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের দাবী দ্রুত যেন জনসাধারনের জন্য খুলে দেয়া হয় সংগ্রহশালাটি।
এদিকে জেলা প্রশাসক ও জসীম ফাউন্ডেশনে সভাপতি মো সরদার সরাফত আলী বলেন, কবির জন্মবার্ষকী উপলক্ষে কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়। পরে মাজার প্রাঙ্গনে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাপকভাবে জসীম পল্লী মেলার আয়োজন করা হবে বলেও তিনি জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন