বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

ইসলাম কখনও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না -------ফরিদপুর জনসভায় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ঃ ইসলাম শার্ন্তির ধর্ম। ইসলাম কখনও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। জঙ্গিরা ইসলামকে হেয় করছে। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মান-সম্মান নষ্ট করছে। এ ব্যাপারে ইমাম, ধর্মীয় পন্তিসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার বিকালে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক দেশে সংঘটিত জঙ্গিবাদী কর্মকার্ন্ডের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম আত্মহননের পথ বেছে নেয়া কখনো সমর্থন করে না। মুসলমানদের মান-সম্মান নষ্ট করছে। এ ব্যাপারে তিনি প্রত্যেককে সোচ্চার হতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে সে ব্যাপারে খোঁজখবর রাখবেন। আপনাদের সন্তানদেরকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের পথ থেকে রক্ষা করবেন।’ এ সময় তিনি স্কুল-কলেজে কোন কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছে সে ব্যাপারে শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে বলেন। এই এলাকা সবসময় অবহেলিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুরে কোনো সরকার উন্নয়ন করেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে এখানে সবধরনের উন্নয়ন বন্ধ ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে ফরিদপুরের সব উন্নয়ন করেছি।
ফরিদপুরকে নতুন বিভাগ করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ঢাকাকে ভেঙে ময়মনসিংহ বিভাগ করেছি। ঢাকাকে ভেঙে নতুন আরেকটি বিভাগ হবে। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর নিয়ে এই বিভাগ করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা আছে।’ তবে তিনি সুস্পষ্ট কোনো অঙ্গীকার করেননি।
এ সময় তিনি বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করায় ফরিদপুরবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। আগামী নির্বাচনেও ফরিদপুরের চারটি আসন আওয়ামী লীগকে উপহার দিতে আহ্বান জানান। এ সময় তিনি উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে নৌকায় ভোট দেয়ার অঙ্গীকার নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষ কিছু পায়। এদেশের যত অর্জন সব আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে।’ এ সময় তিনি বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তারা একদিকে ধর্মের কথা বলে অন্যদিকে মানুষ পুড়িয়ে মারে, কোরআন পোড়ায়। হরতাল-অবরোধের নামে দেশবাসীকে জিম্মি করে।’


বিএনপির আমলের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মুরব্বি আছে তাদের মনে থাকার কথা, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর ৪০ পর্যন্ত টিভিতে শুধু দেখানো হয়েছে ভাঙা সুটকেস। পরে সেই ভাঙা সুটকেস জাদুর বাক্সে পরিণত হয়। মানুষের টাকা লুট করে খালেদা ও তার ছেলেরা বিশাল সম্পদের মালিক হন।’
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে নিজের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরেন। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র পাল্টে যাবে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ফলক উন্মোচন করে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। প্রকল্পগুলো উদ্বোধন ও ভিত্তিপস্তর স্থাপনের পর বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

ফরিদপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল সাহার সভাপতিত্বে সমাবেশে এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও ফরিদপুর-১ আসনের সাংসদ মো. আব্দুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ সংসদ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। 
প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পল্লীকবি জসিম উদ্দীন সংগ্রহশালা, ফরিদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, শিশু একাডেমি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় নির্মাণ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ফরিদপুর, ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল, সদর উপজেলাধীন চর কমলাপুর খেয়াঘাট থেকে বিলমামুদপুর স্কুল সড়কে কুমার নদীর ওপর ৯৬ মিটার আরসিসি ব্রিজ, ভাংগা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১-শয্যা থেকে ৫০-শয্যায় উন্নয়ন প্রকল্প, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ফরিদপুর, বিএসটিআই ভবন, ভাংগা থানা ভবন, মধুখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদর উপজেলা থেকে বাখুন্ডা জিসি হয়ে রসুলপুর ভায়া চর নিখুরদি সড়ক বিসি দ্বারা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুন্সীডাঙ্গী কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৩৩/১১ কেভি হান্তকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র (ক্ষমতা ২০/২৬.৬৬ এমভিএ)। এই ২০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। 
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হচ্ছে- কুমার নদ পুনঃখনন প্রকল্প, আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রকল্প(কামারগ্রাম), ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, পুলিশ অফিসার্স মেস, সালথা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, চন্দ্রপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুরের ছাত্রী নিবাস নির্মাণ, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নির্মাণ, ১৫০০-আসনবিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হলরুম নির্মাণ, সালথা ফায়ার সর্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প। এই বারটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন