মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

আলফাডাঙ্গায় রুপালী ব্যাংকে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সিসি লোনের মাধ্যমে অর্থ লুটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টারঃ রুপালী ব্যাংক ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা শাখায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সিসি লোন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ২০১১ সালে কর্মরত উক্ত ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি ঢাকা রুপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ.জি.এম হিসাবে কর্মরত আছেন।।

জানা যায়, রুপালী ব্যাংক আলফাডাঙ্গা শাখায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পযর্ন্ত শাখা ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মো. রেজাউল ইসলাম। তিনি কর্মরত থাকা কালিন সময় অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজেস্ব আত্বীয় সজনদের  গ্রাহক সাজিয়ে বিভিন্ন নামে ভুয়া পর্চা, কাগজপত্র, ব্যবসা বিহীন প্রতিষ্ঠান, বন্ধকী দলিলে ব্যাংকের প্যানেল উকিলের স্বাক্ষর জাল ও জমির মূল্য অধিক দেখিয়ে সিসি লোনের মাধ্যমে লুটে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

এ বিষয়ে সিসি-১১১নং লোন গ্রহীতার মেয়ে সাবিনা সুলতানা রুপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামে ম্যানেজার মো. রেজাউল ইসলামের নিজ বাড়ি হওয়ার সুবাদে উপজেলাধীন বানা ইউনিয়নের পন্ডিত বানা গ্রামের সাবিনা সুলতানার পিতা মো. সরোয়ার বিশ্বাসের সঙ্গে সু-সম্পর্ক হয়। সুম্পর্কের জের ধরে দরিদ্র সরোয়ারকে অর্থের লোভ দেখিয়ে বেড়ির হাট বাজারে মেসার্স বিশ্বাস এন্টার প্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে রেজাউল ভুয়া পর্চা, কাগজপত্র তৈরি করে, বন্ধকী দলিলে ব্যাংকের প্যানেল উকিলের স্বাক্ষর জাল ও জমির মূল্য অধিক দেখিয়ে আলফাডাঙ্গা শাখা হইতে সিসি(হাইপোঃ) লোন নং-১১১নম্বরে ২৮/৭/২০১১ ইং তারিখে দরিদ্র সরোয়ারকে ৬ (ছয়) লক্ষ টাকা লোন প্রদান করেন। কিন্তু সে লোনের টাকা সরোয়ারকে না দিয়ে রেজাউল নিজেই আত্মসাত করেন। যা বর্তমানে সুদ-আসলে প্রায় ১২লক্ষ টাকা হয়েছে।

লোন গ্রহীতা সরোয়ার বিশ্বাসের ঋন খেলাপী হওয়ায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শাখা ব্যাবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. আমিরুল ইসলাম প্রধান জামিনদার শরিফ হারুন অর রশিদ অভিযুক্ত ব্যাবস্থাপক রেজাউল ইসলামের আপন ভগ্নিপতি হওয়ায় তাকে বাদ রেখে সরোয়ারের আপন দুই ভাই হতদরিদ্র সহজ সরল কৃষক মো. আবজাল বিশ্বাস(৬০) ও মো. মোসলেম বিশ্বাস(৭০) এবং সরোয়ার বিশ্বাসের স্ত্রী গৃহিনী তহমিনা বেগম(৪৫) জামীনদার হিসাবে শনাক্ত থাকার দায়ে আদালতে মামলা করলে বর্তমানে তারা ছয় মাসের জন্য জেল হাজতে রয়েছেন।

সরোয়ার বিশ্বাস টাকা উত্তোলন না করেও লোনের দায়ে মামলা হওয়ায় বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। পলাতক থাকায় লোন গ্রহীতা সরোয়ার বিশ্বাস মুঠোফোনে ঢাকাটাইমকে অভিযোগ করে বলেন, রেজাউল  (শাখা ব্যবস্থাপক) আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর কৃত বিলাঙ্ক চেক রেখে দিয়ে আমাকে বলেন, তুমি বাড়ি চলে যাও, লোনের টাকা পাশ হলে তোমাকে খবর দিব, তখন টাকা নিয়ে যেও। কিন্তু আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে রেজাউল উক্ত চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আমাকে না দিয়ে সে নিজেই আত্মসাত করে। তিনি আরও বলেন, রুপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পিএস মো. হাসান মিয়া রেজাউলের পাশের গ্রাম ও আত্মীয় হওয়ায় এই অপরাধ থেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আলফাডাঙ্গা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উক্ত ব্যাংকের প্রধান সিসি লোন গ্রহীতা আলহাজ্ব মো. মাইনউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বলেন, এ ছাড়াও মেসার্স সামস্ ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠানের নামে মারজান মিয়াকে সিসি লোন-১১২ ও মেসার্স কনজ এন্টার প্রাইজ এর কনজের নামে সিসি লোন-১০৩ নম্বরে ভুয়া কাগজপত্র এবং জালজালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত ম্যানেজার জোগসাজোগে একাধিক সিসি লোনের নাম করে অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তৎকালিন শাখা ব্যবস্থাপক মো. আমিরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি উক্ত লোনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে মামলায় বিবাদী করেছি।

এ ব্যাপারে রুপালী ব্যাংক ফরিদপুর শাখার প্যানেল এডভোকেট মোঃ আব্দুল হান্নান কর্তৃক ২৫/৫/২০১৫ ইং তারিখে রুপালী ব্যাংক আলফাডাঙ্গা শাখায় দেওয়া একটি প্রত্যায়ন পত্রে উল্লেখ করেন, আমার বর্ণিত বন্ধকী দলিল ও আম-মোক্তার নামায় স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ ভাবে সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল ইসলাম ৩১টি সিসি লোনে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা ।

জানতে চাইলে রুপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এ.জি.এম অভিযুক্ত রেজাউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমাকে কিছুদিন সময় দেন, আমি বিষয়টি মিমাংশার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, রেজাউল ইসলাম সাহেব ম্যানেজার থাকা কালিন প্রদত্ত ঋনের মধ্যে বেশকিছু ঋনের কাগজপত্রে ত্রুটি রয়েছে, যা ব্যাংকের ঋনের বিধি বিধান বহির্ভুত বলে প্রতিয়মান হয়। যার কারনে ব্যাংক বেশ কিছু ঋন খেলাপী হয়ে পড়েছে। সরোয়ার বিশ্বাসের ঋনটির বিপক্ষে দ্বায়ের কৃত মামলায় বর্তমানে বিবাদীগন জেল হাজতে রয়েছেন। ইতি পূর্বে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্তও হয়েছিলেন।

জানতে চাইলে রুপালী ব্যাংক ফরিদপুর শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. ওবায়দুল হক ঢাকাটাইমসকে মুঠোফোনে (০১৭৩১৯৩১৮৭৮) বলেন, আমি অভিযোগের অনুলিপি কপি হাতে পেয়েছি, অভিযোগের তদন্তভার আমার কাছে আসলে আমি অতি দ্রুত আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করব। তিনি আরও বলেন, রেজাউল ম্যানেজার থাকাকালিন ৩১টা সিসি লোনের তদন্ত করে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে তার মধ্যে হেড অফিস রেজাইলকে ২টি সিসি লোনের টাকা পরিশোদের দায়িত্বভার দিয়েছেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন